ঢাকা, রোববার   ৩০ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৬ ১৪৩১

সাধারণ মানুষই আমার প্রাণশক্তি জনবিচ্ছিন্ন হতে চাই না

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:৩৩, ২৭ জুন ২০২৪  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সাধারণ মানুষই আমার প্রাণশক্তি মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাকে বাঁচাতে গিয়ে আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। যেহেতু আমার জীবন ঝুঁকিতে থাকে, সেজন্য স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সদস্যরা নিয়োজিত থাকে। কিন্তু নিরাপত্তার জন্য যেন জনবিচ্ছিন্ন না হয়ে যাই সেদিকটা সংবেদনশীলতার সঙ্গে দেখতে এসএসএফকে লক্ষ রাখতে হবে। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসএসএফের ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনবিচ্ছিন্ন হতে গুলি-বোমা লাগে না। এমনিতেই শেষ হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাই না। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ১৫ আগস্টের পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা দেশকে এগিয়ে নিতে পারেনি বরং ক্যু হয়েছে। বিমান বাহিনীর হাজার হাজার সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল। দেশ যে তিমিরে সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছিল। তবে এত বড় গুরু দায়িত্ব নিতে হবে সে প্রস্তুতি কখনোই ছিল না। তখন দেশের দুরবস্থা সহ্য করার মতো ছিল না।

যতক্ষণ নিশ্বাস আছে ততক্ষণ মানুষকে উন্নত জীবন দেয়ার চেষ্টা করে যাব, এমন অঙ্গীকার করে শেখ হাসিনা বলেন, জীবনের ঝুঁকি জেনেই দেশে ফিরেছি। দেশে ফেরার পর থেকে শত বাধা পেয়েও পিছিয়ে যাইনি। দেশের জন্য কাজ করছি।

টানা ক্ষমতায় আছি বলেই দেশের উন্নয়ন দৃশ্যমান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রচেষ্টা ছিল দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। আবার বিরোধী দলে থেকেও দেশকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় এই পরিকল্পনাও করেছি। তবে ২০০৯ থেকে টানা ক্ষমতায় আছি বলেই দেশের উন্নয়ন দৃশ্যমান করতে পেরেছি। স্থায়ী উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পেরেছি।

তিনি বলেন, স্কুলজীবন থেকে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম, কলেজে ওঠার পর ভাইস প্রেসিডেন্টও নির্বাচিত হয়েছিলাম। ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলাম। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বাবা (বঙ্গবন্ধু) রাজনীতি করতেন, মা তার পাশে সব সময় ছিলেন; আর আমরাও সেভাবে কাজ করে গেছি।

তিনি বলেন, দীর্ঘ পরবাস জীবন পার করে ১৯৮১ সালে যখন দেশে ফিরে আসি, তখন দেশ ঘুরে যে দুরবস্থা দেখেছিলাম; সেটা সহ্য করার মতো ছিল না। প্রতি বছর দুর্ভিক্ষ লেগেই থাকত, মানুষের গায়ে কাপড় ছিল না, বিদেশ থেকে পুরনো কাপড় এনে পরানো হতো। একবেলা খাবার জুটত না তাদের। আর রোগের চিকিৎসা ও শিক্ষা সে তো ছিল সুদূর পরাহত। এ দেশটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ, এই সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যাওয়াই ছিল বঙ্গবন্ধুর একমাত্র লক্ষ্য। মানুষ যখন উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে ঠিক তখনই আসে ১৫ আগস্টের আঘাত। ছোট্ট শেখ রাসেলের স্বপ্ন ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার। তাকেও হত্যা করা হয়।

বাধা অতিক্রম করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে : শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার সময় স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বের প্রতীক আমাদের সশস্ত্র বাহিনী, বঙ্গবন্ধু সেই বাহিনীও গড়ে তুলেছিলেন। বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সহায়তায় দেশকে যেমন গড়ে তুলেছিলেন তিনি, সেই সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীকেও গড়ে তুলেছিলেন। যারা একটি দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে, তারা যেন সুপ্রশিক্ষিত ও উপযুক্ত হয় সে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি। আমরা তারই পদাঙ্ক অনুসারণ করে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে এবং সেভাবে কাজ করছে সরকার।

তিনি বলেন, যে কোনোভাবে দেশকে রক্ষা করা, বহিঃশত্রæর আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হবে। আমরা কারো সঙ্গে যুদ্ধে করতে যাব না, কিন্তু আক্রান্ত হলে যেন নিজেদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারি, সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। সেভাবেই লক্ষ্য রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সরকারে আসার পর প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে আমরা গড়ে তুলছি সেভাবেই। যাতে সশস্ত্র বাহিনী উৎকর্ষ অর্জন করতে পারে, সেভাবে কাজ করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশ দক্ষিণ এশিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশকে এখন আর কেউ করুণা করে না, সবাই মর্যাদা দেয়। আমরা দেশে-বিদেশে যে মর্যাদা পেয়েছি, তা ধরে রাখতে হবে- এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার জীবন যে কোনো সময়ই চলে যেতে পারে। কিন্তু আমি পিছিয়ে যাইনি। সব বাধা অতিক্রম করে দেশকে এগিয়ে

নিচ্ছি।

দেশে পণ্যের দাম বাড়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। তবে যতক্ষণ আমার নিশ্বাস আছে, লক্ষ্য একটাই- মানুষের জীবন উন্নত করা।

সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ : এদিকে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য সরকার ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ নামে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে। এ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, সশস্ত্র বাহিনীর আকার বাড়ানো, আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম সংগ্রহ ও সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রশিক্ষণ। সরকারপ্রধান বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এসএসএফ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আমার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন, তাদের জীবনও ঝুঁকির মধ্যে থাকে। যারা আমার নিরাপত্তায় থাকে, তাদের জন্য চিন্তিত থাকি আমি নিজেও। কারণ আমার ওপর বারবার আঘাত এসেছে। আমি দোয়া করি, যারা আমার নিরাপত্তায় নিয়োজিত, আল্লাহ সবাইকে যেন সুরক্ষিত রাখেন।

প্রসঙ্গত, ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চের ঘোষণা অনুসারে, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ১৯৮৬ সালে ‘প্রেসিডেন্সিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স অর্ডিন্যান্স’ নামে একটি অধ্যাদেশ জারি করেন। যা একই বছর ১৯ জুন থেকে কার্যকর হয়। পূর্বের ঘোষণা অনুসারে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এরশাদের তত্ত্বাবধানে রাষ্ট্রপতি ও বিদেশ থেকে আগত রাষ্ট্রপ্রধানদের নিরাপত্তার জন্য ১৯৮৬ সালের ১৫ জুন ‘প্রেসিডেন্ট সিকিউরিটি ফোর্স’ নামে একটি বিশেষ নিরাপত্তা দল গঠন করেন। পরে বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি চালু হওয়ার পর ১৯৯১ সালে ২৭ সেপ্টেম্বর এর নাম পরিবর্তন করে ‘স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) নামকরণ করা হয়। যদিও প্রাথমিকভাবে শুধু রাষ্ট্রপতি ও রাষ্ট্র কর্তৃক ঘোষিত অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা দিতে এসএসএফ গঠিত হয়েছিল। কিন্তু সংসদীয় সরকার পদ্ধতি চালু হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি ছাড়াও সরকারপ্রধানকেও এসএসএফ নিরাপত্তা দিয়ে আসছে এবং এ সংস্থাটিকে তখন থেকে পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তারের অধিকার দেয়া হয়। ২০০৯ সালের ১৫ অক্টোবর জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন গ্যাজেট আকারে প্রকাশ হওয়ার পর সংস্থাটি বর্তমানে জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদেরও নিরাপত্তা দিয়ে আসছে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়