ঢাকা, মঙ্গলবার   ০২ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৮ ১৪৩১

শেরপুরের গ্রামীণ পল্লীতে গড়ে উঠেছে পাখির অভয়াশ্রম

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৫১, ৩০ জুন ২০২৪  

শেরপুরের গ্রামীণ পল্লীতে গড়ে উঠেছে পাখির অভয়াশ্রম

শেরপুরের গ্রামীণ পল্লীতে গড়ে উঠেছে পাখির অভয়াশ্রম

শেরপুরের এক প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপথ কবিরাজপাড়া। যেখানে বাড়ছে উৎসুক জনতার ভিড়। প্রাকৃতিক পরিবেশে বকসহ নানা প্রজাতির পাখ-পাখালীর কিচির মিচির শব্দে মুখরিত হয়ে গড়ে উঠেছে অভয়াশ্রম। ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতিবান্ধা ইউনিয়নের নিভৃত পল্লী কবিরাজপাড়ায় শান্ত পরিবেশে সবুজ বৃক্ষরাজি সমৃদ্ধ ছায়াঘেরা এক বাড়িতে গড়ে উঠেছে অভয়াশ্রম।

ইতোমধ্যেই বাড়িটি পাখিবাড়ি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বাড়িটি জেলা জজ পদ-মর্যাদার এক বিচারকের পৈত্রিক বাড়ি হওয়ায় "জজবাড়ি বকের সারি” বলেও ছন্দে রূপ দিয়েছেন উৎসুক জনতা। পাখি-বাড়ির গাছে কালো রাঙা ঠোট-পা বিশিষ্ট পাখার পিছনের অংশ সাদাকালো রঙের বকের যেন এক অপরূপ কলোনি। ধবধবে সাদাকালো রঙের বক ছাড়াও ধূসর বক। বড় সাদা বক। মাঝারি সাদা বক। ছোট সাদা বক ও ছোট কানি বক রয়েছে এখানে। সকাল-বিকাল বকের দল বেঁধে বসে থাকা। আসা-যাওয়ায়,কলরবে মুখরিত থাকে বাড়িটি। করোনা-লীন সময়ে ও ময়ুরপক্ষী বকের দেখা মেলেছে এখানে। ক্রমাগত বাড়ছে বকের সংখ্যা। বাড়ছে পাখি-বাড়ির দিকে নজর আশেপাশের উৎসুক মানুষের। প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে পাখিপ্রেমরাী ছুটে আসছেন পাখি-বাড়ি দেখার জন্য। শেরপুর খরমপুর মহল্লার জমশেদ ম্যানসনের স্বত্বাধিকারী মৃত. জমসেদ আলীর পৈত্রিক বাড়ি ঝিনাইগাতীর ওই নিভৃত পল্লী কবিরাজপাড়ায়। পরিবারের জ্যৈষ্ঠ সন্তান খুলনা সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলাজজ) রোজিনা আক্তার হেলেন। ছুটিতে বা উৎসবে বাসায় এসেই ছুটে যান কৈশোরের স্মৃতিবিজড়িত কবিরাজপাড়ার ওই বাড়িতে। তার আগ্রহেই গড়ে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী পাখি-বাড়ি। বাড়ির পাশে ২টি বিশাল শিমুল গাছ। বক গাছে দৌড়–ঝাঁপ করলেও আসল বসতি শিমুল গাছেই। গাছ-জুড়ে বসছে যেন পাখির মেলা। পাখিগুলো শান্ত প্রকৃতির। এ-ডাল থেকে ও-ডালে ঝগড়া। বাচ্চার যত্ন। পাখির ডানার পত পত শব্দে পুড়ো বাড়িই পাখির দখলে। বক ছাড়াও দেখা মিলছে মাছরাঙা চিল, বাজপাখি, কাঠ ঠোকরা, ঘুঘু, টিয়াসহ বিলুপ্তপ্রায় অনেক পাখ-পাখালি। নিরীহ পাখির বড় পাখিগুলো কর্মস্থল থেকেই পাখিগুলোর খোঁজ রাখে। এলাকাবসী বলেন, ওই বাড়িতে কোন ভয়-ভীতি নেই। তাই বাড়িটি পাখির অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। বাড়িতে বিলুপ্ত প্রায় দেশীয় অসংখ্য পাখির দেখা মেলে। বিশাল জজবাড়িজুড়ে রয়েছে ক’টি আধা খনন করা বিলের শামুক ও জলজ প্রাণী খেয়েই বেঁচে আছে পাখিগুলো। ডিম দেয়ার আগে অন্য গাছে বাসা বাাঁধে। ডিম ও বাচ্চা ফুটিয়ে বাচ্চাসহ আবার শিমুল গাছে এসেই থাকে। গাছ ও পাখির মিতালিতে বাড়িতে সকাল-সন্ধ্যায় আন্দোলিত হয় বকের কলকাকলিতে। পাখির সংখ্যা বাড়ায় বকগুলো ছড়িয়ে পড়েছে বাড়ির পাশে নির্জন জায়গায়। চৈত্র মাসে নদী-নালা, খাল-বিলে পানি আসলে আবার চলে আসে বাড়িতে। অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত থাকে। বর্ষায় প্রজনন মৌসুমে বক ছানা জন্ম দেয়। শামুক-খেকো বকগুলো ফাল্লুন-চৈত্র মাসে আসে। অগ্রহায়ণের শেষে চলে যায়। জজবাড়ির ছেলে শাইীনুর ইসলাম রেজভি শাহীনও থাকেন শেরপুরের বাসায়। আবাদ-মৌসুম ও বিশেষ প্রয়োজনে বাড়ি আসেন। তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, শামুক খোল-বাড়ির পাশের বিলে রয়েছে প্রচুর শামুক। মাছ ও ব্যাঙ। বিলপাড়ে কোলাহলমুক্ত বাড়িটি পাখিদের আবাসস্থল। বক ছাড়াও রয়েছে মাছরাঙা চিল, বাজপাখি, কাঠ ঠোকরা, ঘুঘু, টিয়াসহ বিলুপ্তপ্রায় অনেক পাখ-পাখালি। নিরাপদেই থাকে পাখিগুলো। নির্জন বাড়িতে ভয়-ভীতি নেই। ফলে বাড়িটি পাখির অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। শেরপুর জেলায় ৩৩১ প্রজাতির পাখির সন্ধান পাওয়া গেলেও ময়ুরপক্ষী বকের অস্তিত্ব পাওয়া যায়না। মূলত প্রজনন কালে বকের পালকের রঙ পরিবর্তন হয়। মাথার উপর দিয়ে পালক বের হয়। তখন বককে ভিন্নতর মনে হয়। ব্যাপক বৃক্ষ নিধনে পাখিরা বাস্তহারা হয়ে পড়েছে। খাল-বিলসহ পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থলগুলোতে পাখি শিকার বন্ধের পাশাপাশি আশ্রয়স্থল বড় গাছগুলো রক্ষা করা অত্যাবশ্যক। তবেই এলাকায় গড়ে উঠতে পারে আরো পাখি-বাড়ি। তৈরি হতে পারে ভিন্ন এক পরিবেশ। ’এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম রাসেল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বৃক্ষ-নিধনে পাখিরা বাসস্থান হারিয়েছে। খাল-বিলসহ পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল গুলোতে শিকার বন্ধে বন্যপ্রাণী আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে। পাশাপাশি আশ্রয়স্থল বড় গাছগুলো রক্ষা করতে হবে। তবেই এলাকাজুড়ে গড়ে উঠতে পারে পাখি-বাড়ি বা পাখির অভয়াশ্রম। তৈরি হতে পারে পাখির জন্য অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশ।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়