ঢাকা, সোমবার   ২৪ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ১০ ১৪৩১

ভোট চুরি করে কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারে না : প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:০৮, ১৬ জুন ২০২৪  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভোট চুরি করে কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারে না। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন তার প্রমাণ। জনগণের আন্দোলনের মুখে খালেদা জিয়াকে ৩০ মার্চ পদত্যাগ করে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়। অর্থাৎ ভোট চুরির অপরাধেই তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। গতকাল গণভবনে আষাঢ়ের প্রথম দিনে কৃষক লীগের তিন মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালের সেই নির্বাচনে খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে। মাত্র ২২ পার্সেন্ট ভোট পড়েছিল সেখানে। কোনো প্রতিপক্ষ ছিল না। জনগণের ভোট চুরি করলে কেউ কিন্তু ক্ষমতায় থাকতে পারে না। বাংলাদেশের জনগণ এ ব্যাপারে খুব সচেতন।

বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধন শেষে সবাইকে ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, যেখানে সেখানে কোরবানি করে জায়গা যেন নষ্ট না হয়, নোংরা না হয় সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যার যার নিজের আবাসস্থল থেকে শুরু করে সব জায়গায় নজর রাখতে হবে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ অভিযানে অবদানের জন্য কৃষক লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকে পুরস্কৃত করেন এবং নেতা-কর্মীদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন কৃষক লীগ সভাপতি সমীর চন্দ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীমা শাহরিয়ার।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির মুখে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের কথা শুনলে হাসি পায়। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানই প্রথম মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে। জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে এ দেশের মানুষের ভোটের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। তার সেই হ্যাঁ-না ভোট দিয়ে অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করার যাত্রা শুরু করেছিল। তিনি বলেন, একাধারে সেনাপ্রধান, তারপর আবার নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রহসন করে জিয়াউর রহমান। ক্ষমতার মসনদে বসেই করে দল গঠন। ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে দলটি গঠন করে, তাকে আবার জিতিয়ে আনার জন্য ভোট চুরির একটা প্রক্রিয়া এ দেশে শুরু করেছিল। তিনি আরও বলেন, জিয়াউর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ক্ষমতায় এসে জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলে এরশাদ। এরপর আসলো খালেদা জিয়া। সেও ক্ষমতায় আসার পর দেখা গেল, শুধু জনগণের ভোট চুরি করাই না, দেশের কৃষকের ভাগ্য নিয়েও ছিনিমিনি খেলে। সার পাওয়া যাচ্ছে না, কৃষক আন্দোলন করেছে। আন্দোলন করার অপরাধে ১৮ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করেছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালি কৃষক কেন! রোজার দিনে শ্রমিকরা মজুরির দাবিতে যখন আন্দোলন করে তখনো প্রায় ১৭ শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করেছিল এই খালেদা জিয়ার সরকার। বিদ্যুতের দাবি করেছিল কানসাটে; কৃষকরা সেচের জন্য পানি পাচ্ছিল না। সেখানেও নয়জন মানুষকে হত্যা করা হয়। তাদের এ অপকর্মের ফলে যখন জনগণ তাদের ওপর বীতশ্রদ্ধ, সে সময় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একটা প্রহসনমূলক নির্বাচন হয়, খালেদা জিয়া সেই নির্বাচনে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে। মাত্র ২২ শতাংশ ভোট পড়েছিল সেখানে। সরাসরি নির্বাচিত কোনো প্রতিপক্ষ ছিল না। ২০১৩-১৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের টানা হরতাল-অবরোধে যে সহিংসতা হয়েছিল, সেই প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩ সালে শুধু আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায়নি, ওরা হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলেছিল। রাস্তার পাশে যত গাছ সব কেটে ফেলা হয়েছিল। কৃষিতে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন এবং স্বাধীনতার পর পর সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। কৃষিকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। জাতির পিতা মাত্র নয় মাসের মধ্যে একটি সংবিধান প্রণয়ন করেন এবং সেই সংবিধানে কীভাবে আমাদের দেশটাকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা যায় এবং আমাদের কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষকে কীভাবে বাঁচানো যায়, সেই দিকনির্দেশনাও সেখানে রয়েছে। সরকারপ্রধান বলেন, কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে আরও উন্নত করে আমরা শিল্পায়নে যাব। কৃষিকে সঙ্গে নিয়ে কৃষিভিত্তিক শিল্পায়নটাই আমাদের বেশি গড়ে উঠবে। আমাদের কাঁচামাল এখান থেকেই আসবে। কৃষিজমি রক্ষায় সরকার দেশে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এ (অর্থনৈতিক) অঞ্চল করার উদ্দেশ্য হলো একজন ব্যবসায়ী যেখানে সেখানে একটা জমি কিনে আর একটা ইন্ডাস্ট্রি করে ফেলে, আমাদের কৃষিজমি নষ্ট করে দেয়। আমাদের আছে তিন ফসলের জমি, কোনোভাবেই এটা নষ্ট করা যাবে না। সেখানে কেউ কোনো ইন্ডাস্ট্রি করতে পারবে না। যত্রতত্র যেন কেউ জমি নষ্ট করতে না পারে, সেজন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিয়েছি। নগরায়ণের চাপে ফসলি জমি যাতে নষ্ট না হয় এবং ফসল উৎপাদনে বাংলাদেশ যেন স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকে সেজন্য সংশ্লিষ্টদের সচেতন থাকার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের খুব তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে, ’৭৪ সালে নগদ টাকা দিয়ে কেনা খাদ্য কিন্তু বাংলাদেশে আসতে দেওয়া দেয়নি। কৃত্রিমভাবে একটা দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করা হলো। সেটার উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে যেভাবেই হোক মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা। আর সেটাও যখন সফল হয়নি, তার পরের ঘটনা হলো ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড।

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়