ঢাকা, রোববার   ৩০ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৬ ১৪৩১

ব্রহ্মপুত্রের খনিজ আহরণের চুক্তি সই, ইজারা পেলো অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৩৬, ২৮ জুন ২০২৪  

ব্রহ্মপুত্রের খনিজ আহরণের চুক্তি সই, ইজারা পেলো অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি

ব্রহ্মপুত্রের খনিজ আহরণের চুক্তি সই, ইজারা পেলো অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি

ব্রহ্মপুত্র নদের বালিতে লুকিয়ে থাকা মূল্যবান খনিজ পদার্থের সন্ধান পেয়েছে গবেষকরা। অতিমূল্যবান এসব পদার্থের মধ্যে রয়েছে ইলমেনাইট, রুটাইল, জিরকন, ম্যাগনেটাইট, গারনেট ও কোয়ার্টজ। দুই বছরের বেশি সময় ধরে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গবেষকগণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে এসব পদার্থের অস্তিত্ব পেয়েছেন। অনেকটা গোপনে নিভৃতে এসব গবেষণা কার্যক্রম চালায় কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় বাসিন্দারা এসবের কিছুই বুঝতে পারেনি।  শিরোনাম ছিল ‘ব্রহ্মপুত্রের প্রতি কিলোমিটারে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার খনিজ।’ এরপর বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেন। অবশেষে ২৮ শর্তে অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি এভারলাস্ট মিনারেল্‌স লিমিটেডকে ইজারা দেয়া হয়। ওই বিদেশি কোম্পানি গাইবান্ধা সদর ও ফুলছড়ি উপজেলায় ৭৯৯ হেক্টর চরাঞ্চলে ভারী খনিজ আহরণ করবে আগামী ১০ বছর। গত ২০শে জুন খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো-বিএমডি ইজারার অনুমোদন দেয়।

শর্তের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন মহাপচিলাক (অতিরিক্ত সচিব) আব্দুল কাইউম সরকার। ২৮ শর্তের মধ্যে রয়েছে খনি কার্যক্রমের সর্বক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। প্রয়োজনে দেশ-বিদেশে স্থানীয় কর্মীদের প্রশিক্ষণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়াও কৃষিজমি, জনবসতি ও পরিবেশ সুরক্ষিত রেখে স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত ভারী খনিজ দ্রব্য সরবরাহ এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের উপর ভিত্তি করে উত্তোলিত খনিজের খনিমুখের মূল্য নির্ধারণের নির্দেশনা দেয়া হয় ইজারাপত্রে।

খনিজ পদার্থ বিক্রয়ের ক্ষেত্রে দেশীয় শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার বা স্থানীয় বাজার সৃষ্টির ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। পত্রে আরও উল্লেখ আছে খনি কার্যক্রমে খনিজ পৃথকীকরণের সময় তেজস্ক্রিয় পদার্থ পাওয়া গেলে খনি ও খনিজ সম্পদ বিধিমালা-২০১২ এর বিধি ৫(৯) অনুযায়ী ব্যবস্থা করা হবে। বিষয়টি খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো ও পরমাণু শক্তি কমিশনকে অবহিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিএমডি, জেলা প্রশাসক, গাইবান্ধার সঙ্গে পরামর্শ করে উক্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করবে। খনি কার্যক্রমের কোনো পর্যায়েই স্থানীয় বসতি উচ্ছেদ করা যাবে না এবং খনি এলাকা বা তার পার্শ্ববর্তী স্থানীয় জনগণের নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন চলাফেরা করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ইজারা গ্রহীতাকে গ্রহণ করতে হবে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় প্রশাসন, বিএমডি ও জিএসবি’র প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত কমিটি খনিজ আহরণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ঝুঁকি চিহ্নিতকরণ এবং ঝুঁকি নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন কার্যক্রম তদারকি করবে। বিএমডি সূত্রে জানা যায়, আহরণের পর খনিজের ৪৩ ভাগ বাংলাদেশ সরকার আর বাকিটা পাবে এভারলাস্ট মিনারেল্‌স লিমিটেড। খনিজের রাজস্ব প্রাপ্তির বিষয়ে খনি ও খনিজ সম্পদ বিধি অনুসরণ করে প্রতি তিন মাস পরপর রয়্যালিটি পরিশোধ করবে ইজারা গ্রহীতা প্রতিষ্ঠান।

গাইবান্ধার প্রায় ৪ হাজার হেক্টর বালুচর জুড়ে দীর্ঘ গবেষণার পর ২ হাজার ৩শ’ ৯৫ হেক্টর এলাকা ইজারা চেয়ে আবেদন করলে গত ২০শে জুন গাইবান্ধা সদর ও ফুলছড়ি উপজেলায় ৭৯৯ হেক্টর চরাঞ্চল ভারী খনিজ খনি হিসেবে ১০ বছরের জন্য অস্ট্রেলিয়ান প্রতিষ্ঠান এভারলাস্ট মিনারেল্‌স লিমিটেডকে ইজারা মঞ্জুরি দেয় খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো-বিএমডি। অস্ট্রেলিয়ান প্রতিষ্ঠান এভারলাস্ট মিনারেল্‌স লিমিটেড খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান শেষে বালাসী ঘাটে একটি প্ল্যান্ট স্থাপন করে। 

উত্তরের জেলাগুলোর উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের বালির নিচে লুকিয়ে থাকা এসব খনিজ পদার্থগুলো হচ্ছে, ইলমেনাইট, রুটাইল, জিরকন, ম্যাগনেটাইট, গারনেট ও কোয়ার্টজ অন্যতম মূল্যবান খনিজ। এসব খনিজের মধ্যে জিকরন সিরামিক, টাইলস, রিফ্যাক্টরিজ ও ছাঁচ নির্মাণে ব্যবহার করা হয়। রং, প্লাস্টিক, ওয়েল্ডিং রড, কালি, খাবার, কসমেটিকস, ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় রুটাইল। সিরিশ কাগজ উৎপাদনে ব্যবহার হয় গারনেট। চুম্বক, ইস্পাত উৎপাদনসহ বিভিন্ন কাজে লাগে ম্যাগনেটাইট। টিটেনিয়াম মেটাল, ওয়েল্ডিং রড ও রং উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয় ইলমেনাইট। আর কাঁচ শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল কোয়ার্টজ। 

গবেষণায় শনাক্তের পর ‘ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি এন্ড মেটালার্জি’ (আইএমএমএম) বলেছে প্রতি এক বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্রাপ্ত খনিজ সম্পদের দাম ৩ হাজার ৬শ’ ৩০ কোটি টাকা। গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের বালিতে প্রচুর পরিমাণে এসব খনিজ সম্পদ আছে নিশ্চিত করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জগৎ বন্ধু মণ্ডল বলেন, শর্ত অনুযায়ী ইজারাদার প্রতিষ্ঠান খনিজ উত্তোলন করবে এবং সরকারকে বুঝে দেবে। এসব কিছু আমরা দেখাশোনা করবো। এদিকে, মহামূলবান খনিজ পদার্থের অস্তিত্ব মিললেও বালু দস্যুরা এখনো অবাধে ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন করেই চলছে। প্রশাসেনর পক্ষ থেকেও আলু উত্তোলন রোধ করার কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে পাশের উপজেলা সাঘাটার ভরতখালী এলাকায় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি অতিমূল্যবান বালি অবাধে উত্তলন করেছে। এসব থামানোর দাবি এখন এলাকার সাধারণ মানুষের। 

সর্বশেষ
জনপ্রিয়