ঢাকা, বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৮ ১৪৩১

বিএনপির আন্দোলন : তেজ নেই কর্মীদের, আগ্রহ নেই নেতাদের

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৫২, ১ জুলাই ২০২৪  

বিএনপির আন্দোলন : তেজ নেই কর্মীদের, আগ্রহ নেই নেতাদের

বিএনপির আন্দোলন : তেজ নেই কর্মীদের, আগ্রহ নেই নেতাদের

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নতুন করে আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপি। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর হতাশাগ্রস্ত-বিধ্বস্ত দলটিকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর জন্যই খালেদা জিয়ার ইস্যুকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনের প্রথম দিনের কর্মসূচিতে কর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা একেবারেই ছিল না। কর্মীদের মধ্যে এই আন্দোলন নিয়ে কোন উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়নি। বরং দলের কমিটি কী হচ্ছে, কারা নেতৃত্বে আসছে, কোথায় কোন কমিটি বাণিজ্য হচ্ছে- এ নিয়ে আলোচনায় মুখর ছিলেন কর্মীরা।

পাশাপাশি নেতাদের মধ্যেও অনেককে অনুপস্থিত দেখা গেছে। ২৮ অক্টোবরের আগে পর্যন্ত বিএনপির সমাবেশগুলোতে যে উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গিয়েছিল নেতাদের মধ্যে, এখন সেই উদ্দীপনাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সকলেই বুঝতে পারছেন যে, এটি একটি দায়সারা আন্দোলন। এই আন্দোলনের মাধ্যমে কিছু অর্জন করা যাবে না। কিন্তু তারপরেও আন্দোলনটি করতে হচ্ছে।

বিএনপির কোন কোন নেতা মনে করছেন, এই আন্দোলন আসলে একটি পরীক্ষা। এর মাধ্যমে বিভিন্ন কমিটিগুলো পুনর্গঠন করা হবে। আন্দোলনে কার কী ভূমিকা তার উপর নজর রাখা হচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে পুরস্কৃত করা হবে এবং যারা আন্দোলনে অবদান রাখবে না তারা কমিটি থেকে বাদ পড়বে। সে রকম আশঙ্কা থেকেই অনিচ্ছায় অনেকে কর্মসূচিগুলোতে যাচ্ছে। কিন্তু এই ধরনের কর্মসূচির ফলাফল কী, এই কর্মসূচি থেকে বিএনপি কী পাবে সেই প্রশ্ন সামনে উঠে এসেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি একটি টালমাটাল অবস্থার মধ্যে দিয়ে সময় অতিবাহিত করছে বিএনপি। বিএনপিতে একদিকে যেমন শীর্ষ নেতার প্রতি অনাস্থা তৈরি হয়েছে, তেমনই পরবর্তী নেতারাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। দলের ভিতরে কোন গণতন্ত্র চর্চা নেই। আন্দোলনের কৌশল নিয়েও কোন ভাবনা নেই। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে একাট্টা করে যুগপৎ আন্দোলন করার যে পরিকল্পনা, সেই পরিকল্পনাতেও সবুজ সঙ্কেত মেলেনি লন্ডন থেকে। ফলে নেতারা এখন হতাশ।

বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেছেন, আমাদের সামনে অনেক আন্দোলনের ইস্যু রয়েছে। নজিরবিহীন দুর্নীতি, বেনজীর, আজিজ, মতি কেলেঙ্কারি নিয়ে সরকারকে চাপে ফেলা যেত। কিন্তু সেই সব বিষয় নিয়ে আন্দোলন করা যাচ্ছে না। বরং বিএনপি এখন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ইস্যুতে আন্দোলন করছে। কেন এই আন্দোলন? এই প্রশ্নের উত্তর বিএনপির নেতারাই জানেন না। অনেকেই মনে করছেন যে, বিএনপিকে সংগঠিত করার জন্যই হয়তো এই কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার ইস্যুটি বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে স্পর্শকাতর এবং আবেগের। আর এ কারণেই তারা হয়তো এই বিষয় নিয়ে আন্দোলন করতে চাইছেন।

কিন্তু খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে রয়েছেন। আর স্বাভাবিক কারণেই জনগণের আবেগ তাকে নিয়ে অনেকটাই ফিকে হয়ে আছে। এই বাস্তবতায় বেগম খালেদা জিয়ার ইস্যুতে আন্দোলনের কতটুকু জয় আসবে সে নিয়ে কর্মীরা সন্দিহান।

কর্মীরা বলছেন যে, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে তারা একটা হয়রানির মধ্যে আছেন। বেশিরভাগ কর্মীই বাড়িতে থাকতে পারছেন না। অনেকে আটক। তাদের কোন খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে না। তাদেরকে জেল থেকে মুক্ত করা বা তাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কোন নেতা নেই। অথচ নতুন কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে। এই কর্মসূচি থেকে ফলাফল কি আসবে সে সম্পর্কেও সঠিক কোন ধারণা দিতে পারছেন না নেতৃবৃন্দ।

তারা মনে করছেন, এ সকল কর্মসূচি শুধু বিএনপিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এর ফলে বিএনপির কোন লাভ হবে না। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নতুন করে আন্দোলনের কর্মসূচিতে আগামীকাল মহানগরগুলোতে বিক্ষোভ রয়েছে এবং তিন জুলাই বিএনপি জেলায় জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। কিন্তু এসব বিক্ষোভ সমাবেশ ও কর্মসূচির মাধ্যমে দলের মধ্যে অনৈক্য-হতাশা আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন বিএনপির নেতৃবৃন্দ।

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়