ঢাকা, সোমবার   ০৮ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২৪ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর হবে সম্পর্কের মাইলফলক

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:৩৩, ৫ জুলাই ২০২৪  

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর হবে সম্পর্কের মাইলফলক

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর হবে সম্পর্কের মাইলফলক

চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফর হবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মাইলফলক। এ সফরে ব্যবসা-বাণিজ্য, আর্থিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা, ডিজিটাল ইকোনমি, মিডিয়া সহযোগিতা, জনগণের পর্যায়ে যোগাযোগসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বেশকিছু চুক্তি কিংবা সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। বাংলাদেশের প্রস্তাবিত দক্ষিণ বাংলার উন্নয়নে সহযোগিতা এবং চীনের প্রস্তাবিত মুক্তবাণিজ্য চুক্তি নিয়েও আলোচনা হতে পারে। সফরটি দুদেশের মধ্যে বর্তমান কৌশলগত সম্পর্ককে আরও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্পের বিষয়ে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, তিস্তা প্রকল্প বাংলাদেশের প্রকল্প। এ প্রকল্পের বিষয়ে বাংলাদেশ যে সিদ্ধান্ত নেবে, তার প্রতি সম্মান জানাবে চীন। প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হতে পারে বলে চীনের রাষ্ট্রদূত ইঙ্গিত দিয়েছেন।

চীনের রাষ্ট্রদূত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ডিকাব আয়োজিত নিয়মিত অনুষ্ঠান ‘ডিকাব টক’-এ দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন। ডিকাব সভাপতি নুরুল ইসলাম হাসিব এবং সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপুও বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ থেকে ১১ জুলাই চারদিনের সফরে চীন যাচ্ছেন। এর আগে তিনি ভারত সফর করেছেন। ভারত সফরকালে তিস্তায় পানি সংরক্ষণাগার ও ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত একটি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রকল্পটি চীনের অর্থায়নে করার বিষয়ে আলোচনা চলাকালে ভারতও এ প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

জানতে চাইলে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, তিস্তা নদী বাংলাদেশের ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে প্রবাহিত। ফলে সত্যিকার অর্থে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাদের সহায়তা গ্রহণ করবে, সেটা বাংলাদেশের সিদ্ধান্তের বিষয়। বাংলাদেশের সিদ্ধান্তের প্রতি চীন সর্বদা শ্রদ্ধাশীল থাকবে।

রোহিঙ্গা সংকটের ব্যাপারে চীনের মধ্যস্থতায় আপডেট জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা হয়েছে। সেখান থেকে বেশ অগ্রগতি হয়েছিল এবং রোহিঙ্গাদের প্রথম ব্যাচ মিয়ানমারে পাঠানোর অপেক্ষায় ছিল। অক্টোবরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিশেষ করে রাখাইন রাজ্যে সংঘাত শুরু হয়। সেই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার কারণে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। এখন আমরা চেষ্টা করছি রাখাইনে যুদ্ধবিরতি করার জন্য। মিয়ানমার আর্মি ও আরাকান আর্মিকে বলা হয়েছে। সেখানে শান্তি ফেরানোর ব্যাপারে রাজনৈতিক সমঝোতা হলে দ্রুত রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হতে চীন দ্বিধা করবে না। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের দায়িত্ব শুধু চীনের একার নয়। এ ব্যাপারে আসিয়ানসহ অবশিষ্ট বিশ্বেরও ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। চীন বিষয়টি নিয়ে সব জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে। দক্ষিণ বাংলার উন্নয়নে চীনের সহায়তা সম্পর্কে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, এ সহায়তার বিষয়ে বাংলাদেশ প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নিজেই এ প্রস্তাব দিয়েছেন। পদ্মা সেতুর কাজ সমাপ্ত হওয়ার পর এই উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের জন্য জরুরি। এ বিষয়ে চীনের সঙ্গে আলোচনা প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। বিষয়টি সম্পর্কে বাংলাদেশের কাছ থেকে কিছু পরিকল্পনা পাওয়া প্রয়োজন। আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরে এ ব্যাপারে অনেক কাজ হবে।

বাংলাদেশকে চীনের অধিক গুরুত্ব দেওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করছে। বিগত ৫০ বছরে অর্থনৈতিক উন্নতি অনেক হয়েছে। অনেক বছর ধরে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী কিছুদিনের মধ্যে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ২৮০০ ডলার। পাঁচ বছর পর তা ৪০০০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে। তখন বাংলাদেশ গ্লোবাল সাউথের নেতায় পরিণত হবে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেন, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ ও চীনের অবস্থান অভিন্ন। আমাদের দুই দেশ শান্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, বাংলাদেশ চীনের কৌশলগত অংশীদার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফরকালে এ সম্পর্ক আরও এক নতুন উচ্চতায় যাবে। সম্ভাবনাময় আরও অনেক ক্ষেত্র আমরা কাজে লাগাব। সফরকালে অতীতের অর্জনকে আরও সামনে এগিয়ে নেব। আমরা জানি, এই সফরের প্রতি সবাই নজর রাখছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এটা হবে পঞ্চমবার চীন সফর। বাংলাদেশ উন্নতি করে দেশকে ‘বে অব বেঙ্গল মিরাকল’-এ পরিণত করেছে। বাংলাদেশ এলডিসি থেকে ২০২৬ সালে উপরের ধাপে উন্নতি করছে। ২০৪১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উন্নীত করে সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের আগামী পাঁচ বছরের জন্য একটি দিকনির্দেশনামূলক রূপরেখা দেবে। আমাদের দুই দেশ সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে সমর্থন দিয়ে পারস্পরিক সহাবস্থানের পাঁচটি নীতিমালা মেনে চলবে। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা এবং উইন উইন সহযোগিতার ক্ষেত্রে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক একটি মডেল। চীন হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত অংশীদার। চীনের বিনিয়োগ বাংলাদেশে সাড়ে পাঁচ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। ব্রিকসে চীন বাংলাদেশের অংশীদার।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়