ঢাকা, বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৮ ১৪৩১

নতুন অর্থবছরের বাজেট পাস, আজ থেকে কার্যকর

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৪১, ১ জুলাই ২০২৪  

নতুন অর্থবছরের বাজেট পাস, আজ থেকে কার্যকর

নতুন অর্থবছরের বাজেট পাস, আজ থেকে কার্যকর

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে। ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’ স্লোগানে বাজেটের আকার ধরা হয়েছে সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। দেশের ৫৩তম এই বাজেটের আকার বাড়ছে ৪.৬ শতাংশ। বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে বৈশ্বিক মন্দা সফলভাবে মোকাবেলা করে চলমান উন্নয়ন বজায় রাখা ও উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে বলে আশা করছে সরকার।

গতকাল রবিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ‘নির্দিষ্টকরণ বিল-২০২৪’ পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে কণ্ঠভোটে সর্বসম্মতিতে তা পাস হয়। আজ সোমবার নতুন অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে এই বাজেট কার্যকর হবে।

এর আগে গত ৬ জুন দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সরকার ও বিরোধী দলের ২৩৪ জন সংসদ সদস্য আলোচনায় অংশ নেন।গত শনিবার অর্থ বিল পাস হয়।

নির্দিষ্টকরণ বিল অনুমোদন

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে সরকার ও বিরোধী দলের বেশির ভাগ সদস্যের উপস্থিতিতে বাজেটের ওপর ৫৯টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে ২৫১টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনা হয়। সরকার ও বিরোধী দলের হুইপের মধ্যে সমঝোতা অনুযায়ী তিনটি মঞ্জুরি দাবি (আইন, শিক্ষা ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়) আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়। আলোচনা শেষে মঞ্জুরি দাবিগুলো কণ্ঠভোটে সংসদে গৃহীত হয়।

এরপর অর্থমন্ত্রী সর্বোচ্চ ১২ লাখ ৪১ হাজার ৭৫২ কোটি ৩২ লাখ ৯ হাজার টাকা ব্যয়ের অনুমোদন নিতে ‘নির্দিষ্টকরণ বিল-২০২৪’ পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পরে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়।

এ সময় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদেরসহ সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়িয়ে বাজেট বাস্তবায়নের যাত্রাকে স্বাগত জানান।

পাস হওয়া বাজেটটি দেশের ৫৩তম বাজেট ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৫তম ও অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট। এই বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা।

বাকি দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকবে। দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) এরই মধ্যে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

নতুন অর্থবছরে কালো টাকার মালিকরা আয়ের উৎস সম্পর্কে প্রশ্নের সম্মুখীন না হয়েই তাঁদের অঘোষিত সম্পদকে বৈধ করার সুযোগ পাচ্ছেন। প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী দেশের প্রচলিত আইন যা-ই থাকুক, কোনো করদাতা ফ্ল্যাট, জমির পাশাপাশি নগদ অর্থসহ স্থাবর সম্পত্তির জন্য ১৫ শতাংশ কর দিলে কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবে না। সংসদের ভেতরে-বাইরে কঠোর সমালোচনা সত্ত্বেও প্রস্তাবটি বহাল রাখা হয়েছে। নতুন অর্থবছরে সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা বহাল থাকছে।

বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক উৎস থেকে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এক লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের। ব্যাংকিং খাত ছাড়াও নন-ব্যাংকিং খাত থেকে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। 

বাজেটে ১ জুলাই থেকে নিয়োগ পাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের অবসর-পরবর্তী পেনশন সুবিধার পরিবর্তে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ থাকছে। স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের এই স্কিমের আওতায় আনা হয়েছে। অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্য ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে এই ব্যবস্থা চালু করা হবে। এই অর্থবছর থেকে নিয়োগ পাওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসর-পরবর্তী পেনশন সুবিধার পরিবর্তে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আর করমুক্ত আয়কর সীমা বিদ্যমান সাড়ে তিন লাখ টাকাই বহাল থাকবে।

বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নিত্যপণ্যের ওপর উৎস কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ জন্য চাল, গম, আলু, পেঁয়াজ, ভুট্টা, ভোজ্য তেল, লবণ ও চিনির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের সরবরাহকারীদের ঋণপত্রের ওপর করহার ১ শতাংশ করা হয়েছে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়