দুই বছরে যা দিয়েছে পদ্মাসেতু, আরো যা পাবে দেশ
নিউজ ডেস্ক
দুই বছরে যা দিয়েছে পদ্মাসেতু, আরো যা পাবে দেশ
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে রাজধানীর সঙ্গে একই সুতোয় বেঁধেছে স্বাধীনতাপরবর্তী সর্ববৃহৎ অর্জন পদ্মাসেতু। দক্ষিণের জনপদের অর্থনীতিতে রচিত হয়েছে যুগান্তকারী অধ্যায়, যার প্রভাব পড়েছে পুরো দেশে। কৃষিপণ্য বাজারজাত ছাড়াও শিল্প কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং আর্থসামাজিক অবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়নসহ সব সেক্টরেই এসেছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বড় পরিবর্তন।
২০২২ সালের ২৫ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মাসেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর যানবাহন চলাচল শুরু হয় ২৬ জুন। এই দুই বছরে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এসেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর চালু হয় পদ্মাসেতুর রেলপথ। এখন সড়ক পথের সঙ্গে রেলপথেও নিয়মিত চলছে ট্রেন। চলতি বছর ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ট্রেন চালুর মধ্য দিয়ে ট্রান্স-এশিয়া নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হতে যাচ্ছে পদ্মাসেতু।
যানবাহন পারাপার ও টোল আদায়ে রেকর্ড
বিগত দুই বছরে পদ্মাসেতুতে টোল আদায়েও হয়েছে রেকর্ড। এই সময়ে সেতু পারাপার হয়েছে প্রায় সোয়া কোটি যানবাহন, যা থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকারও বেশি।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত পরিচালক আমিরুল হায়দার চৌধুরী বলেন, দুই বছরে সেতুতে ১ কোটি ২৭ লাখ ১৩ হাজার ২৭৫ যান পারাপার করেছে। এতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ হাজার ৬৪৮ কোটি ৭৬ লাখ ১৮ হাজার ৩০০ টাকা। দুই বছরের প্রতিদিন গড়ে যান চলাচল করেছে ১৯ হাজার ১৬৮টি। প্রতিদিনের গড় টোল আদায় ২ কোটি ৩২ লাখ ১৪ হাজার ২২২ টাকা। প্রথম বছর ৫৭ লাখ ১৭ হাজার ৪৬টি যান পারাপারে টোল আদায় হয়েছে ৮০১ কোটি ৪৪ লাখ ২৭ হাজার ২০০ টাকা। আর দ্বিতীয় বছর আয় আরো বেড়েছে। ৬৯ লাখ ৯৬ হাজার ২২৯টি যান পারাপারে টোল আদায় হয় ৮৪৭ কোটি ৩১ লাখ ৯১ হাজার ১০০ টাকা।
বিনিয়োগের অন্যতম আকর্ষণ পদ্মাপাড়
সেতু সচিব মঞ্জুর হোসেন বলেন, সেতুর সুফল চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। দুই পাড়ের আর্থসামাজিক অবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে। সড়কপথ ও রেলপথ ছাড়াও পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় নদী দিয়ে হাই ভোল্টেজ জাতীয় গ্রিড লাইন স্থাপনে রামপাল ও পায়রার বিদ্যুৎ যুক্ত হতে পেরেছে রাজধানীতে। নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ নতুন নতুন সাফল্য বয়ে আনছে।
পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার চিত্র পাল্টে গেছে। এক সময়ের গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে এখন একের পর এক কলকারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণের প্রতিযোগিতা চলছে। যেন শুরু হয়েছে এক শিল্প বিপ্লব। গত দুই বছরে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের অন্যতম আকর্ষণ স্পট এখন পদ্মার দুই পাড়। গ্রামের সঙ্গে শহুরে মানুষের যোগাযোগ বেড়েছে। কারখানা স্থাপনের জন্য এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশ ছাড়াও মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে জমি কেনা হচ্ছে। চলছে অবকাঠামো নির্মাণের প্রস্তুতি।
পদ্মাসেতুর দ্বার উন্মোচনের পর পর্যটন, শিল্পায়ন, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষির আধুনিকায়ন, কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য পাওয়াসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার সুফল পাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ।
পদ্মাসেতু ও ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়কে এক্সপ্রেসওয়ে চালুর ফলে এ রুটে যাতায়াতের সময় কমেছে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ খুব সহজে মাত্র দুই থেকে আড়াই ঘণ্টায় রাজধানীতে পৌঁছে অফিস-আদালত, জরুরি কাজকর্ম করতে পারছে। পদ্মাসেতুতে যোগাযোগ চালুর পরে সময় বাঁচায় ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দ্বার খুলেছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য দক্ষিণাঞ্চলের জেলা শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জে দ্রুত পরিবহন সম্ভব হচ্ছে, যা ব্যবসায়ীদের ব্যবসা-বাণিজ্য ত্বরান্বিত করছে এবং ক্রেতারা আগের তুলনায় কম সময়ের মধ্যে তাদের পণ্যসামগ্রী হাতে পাচ্ছে।
পদ্মাসেতু চালুর পর গত দুই বছরে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাসকারী গ্রামের মানুষগুলো যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যখন মন চায় ছুটে আসছেন বাড়িতে। গ্রাম থেকে যারা এক প্রকার বিচ্ছিন্ন ছিলেন, সেই শহুরে মানুষের আসা-যাওয়া বেড়েছে গ্রামের বাড়িতে। বাড়ছে গ্রাম-শহরের মানুষের যোগাযোগ।
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও পদ্মাসেতুর সুফল
মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের দেশে প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মাসেতু উপহার দিয়েছেন। ফলে গত দুই বছরে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়েছে। পদ্মাসেতু চালু হবার পর রেলপথ চালু হওয়ায় আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থার পুরোপুরি পরিবর্তন হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন বঙ্গবন্ধু সেতুর উদ্বোধনের পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের দ্বার উন্মোচনে পদ্মাসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। পদ্মাসেতু শুধু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নয়, পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতিই বদলে দিচ্ছে। এই সেতু দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ, বাণিজ্য, পর্যটনসহ নানা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, এই সেতু ভবিষ্যতে ট্রান্স-এশীয় রেলপথের অংশ হবে। তখন যাত্রীবাহী ট্রেন যত চলবে, তার চেয়ে অনেক বেশি চলবে মালবোঝাই ট্রেন। ডাবল কন্টেইনার নিয়ে ছুটে চলবে ট্রেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হবে মোংলা ও পায়রা বন্দর। অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে দেশের প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই সেতু।
এ সংসদ সদস্য আরো বলেন, পদ্মাসেতু দিয়ে কৃষিপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল এবং শিল্পজাত পণ্যসামগ্রী সহজে ও স্বল্পব্যয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছে যাচ্ছে। এর ফলে দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। শিল্প ও ব্যবসার প্রসার ঘটেছে। নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। এই সেতু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে অর্থনীতির ভিত্তি ও সোনালি সোপান হিসেবে কাজ করছে পদ্মাসেতু। এ সেতুর কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন হয়েছে। জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। শিল্প কারখানা গড়ে ওঠায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এখানে প্রতিটি সেক্টরে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে।
পদ্মাসেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, যেকোন কাজেই চ্যালেঞ্জ আছে। পদ্মাসেতুর মতো এত বড় প্রজেক্টে প্রথমেই আমাদের কাছে যেটা চ্যালেঞ্জ ছিল সেটা হলো অর্থায়ন। বিশ্বব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নেন নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মাসেতু করবেন। প্রথমেই সে চ্যালেঞ্জটার মুখোমুখি হই আমরা। সরকার আমাদের সাপোর্ট দিয়েছে। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জটি হলো টেকনিক্যাল। আমাদের ম্যানেজমেন্ট দিয়ে এটা করতে পারব কিনা বা আমাদের ম্যানেজমেন্টে বিদেশি ঠিকাদার আসবে কিনা। এমন বহু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ি আমরা।
তিনি আরো বলেন, পদ্মাসেতু শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, পুরো বিশ্বের জন্যই একটি রোল মডেল। প্রবল স্রোতের এই পদ্মায় সেতুটি তৈরি করতে আমাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছে। সবকিছুতেই আধুনিক মান নিশ্চিত করা হয়েছে।
পদ্মাসেতুর ৫ বিশ্বরেকর্ড
সর্বাধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে এটির নির্মাণে। খরস্রোতা পদ্মায় সেতু নির্মাণে বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, পানিপ্রবাহ বিবেচনায় বিশ্বে আমাজন নদীর পরই এর অবস্থান। মাটির ১২০ থেকে ১২২ মিটার গভীরে গিয়ে পাইল বসানো এই রেকর্ডের অন্যতম। পৃথিবীর অন্য কোথাও কোনো সেতুর পাইল এত গভীরে প্রবেশ করাতে হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্ব রেকর্ড হলো পিলার এবং স্প্যানের মাঝের বেয়ারিং। এখানে ১০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ওজনের একেকটি বেয়ারিং ব্যবহৃত হয়েছে। পৃথিবীতে এর আগে এত বড় বেয়ারিং ব্যবহার করা হয়নি কোনো সেতুতে। তৃতীয় রেকর্ড হলো নদী শাসন। ১৪ কিলোমিটার (১.৬ মাওয়া+১২.৪ জাজিরা) এলাকা নদী শাসনের আওতায় আনা হয়েছে। এই নদী শাসনে খরচ হয়েছে ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকারও বেশি। পরের রেকর্ডটি ব্রিজে ব্যবহৃত ক্রেন। পিলারের ওপর স্প্যান বসাতে যে ক্রেনটি ব্যবহৃত হয়েছে সেটি আনা হয়েছে চীন থেকে। প্রতি মাসে এর ভাড়া বাবদ গুণতে হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। সাড়ে তিন বছরে মোট খরচ হয়েছে ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বিশ্বে প্রথম এই সেতুটি বানাতেই এত দীর্ঘ দিন ক্রেনটি ভাড়ায় থেকেছে। এই ক্রেনটির বাজার দর ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আরেকটি রেকর্ড, পদ্মাসেতুই বিশ্বে প্রথম যা কংক্রিট আর স্টিল দিয়ে নির্মিত হয়েছে।
- Tk 12,500 announced as minimum wage for RMG workers
- মাছ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে সার্বিক সহযোগিতা করবে সরকার : মৎস্যমন্ত্রী
- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে থাকছে রেকর্ড সংখ্যক পর্যবেক্ষক
- PM opens Southeast Asia`s largest fertiliser factory in Narsingdi
- 2024 election was the fairest since 1975: PM
- দ্রুত এগিয়ে চলছে বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর কাজ
- সুষ্ঠু নির্বাচনে সব সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি
- জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি
- কর্মসংস্থানের জন্য প্রতি ঘণ্টায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যান ১৫২ বাংলাদেশি
- মানবিক নারী পুতুল ও অটিস্টিক শিশুদের নতুন ভোর