ঢাকা, রোববার   ৩০ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৬ ১৪৩১

তারেক জিয়াকে সাজার মুখোমুখি করতে প্রচেষ্টা চলছে : প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ২৭ জুন ২০২৪  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

গ্রেনেড হামলা, মানি লন্ডারিংসহ দুর্নীতির একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমানকে (তারেক জিয়া) প্রাপ্য সাজার মুখোমুখি করতে সব প্রচেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল জাতীয় সংসদ অধিবেশনে টেবিলে উপস্থাপিত প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিনের লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, গ্রেনেড হামলা ও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করা হয়েছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, খুনি জিয়া রক্তাক্ত হাতে খাবার খেতেন এবং খেতে খেতেই ফাঁসির আদেশে স্বাক্ষর করতেন। জিয়ার নির্দেশে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়। জাতির পিতাকে হত্যায়ও জিয়ার সংশ্লিষ্টতা ছিল। অথচ, এই জিয়াকে জাতির পিতাই ১৯৭২ সালে কর্নেল, ১৯৭৩ সালে ব্রিগেডিয়ার এবং একই বছরে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়েছিলেন। ক্ষমতায় থাকতে হিংস্র্র হয়ে উঠেছিল জিয়া। সরকারি দলের সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিনের প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমানকে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কিছু আইনগত জটিলতা রয়েছে। তবে সব জটিলতা আইনি প্রক্রিয়াতেই নিরসন করে এ অপরাধীকে দেশে ফিরিয়ে আনা ও তার প্রাপ্য সাজার মুখোমুখি করার বিষয়ে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো কাজ করছে। দ্রুতই ফলাফল পাওয়া যাবে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পলাতক আসামিদের বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত পাঁচজন পলাতক আসামি লে. কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আবদুর রশিদ, মেজর (বরখাস্ত) শরিফুল হক ডালিম, মেজর (অব.) নূর চৌধুরী, রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন খান ও লে. কর্নেল (অব.) রাশেদ চৌধুরী এবং একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পলাতক আসামি মাওলানা মো. তাজউদ্দিন, হারিছ চৌধুরী ও রাতুল আহম্মেদ বাবু ওরফে বাবু ওরফে রাতুল বাবুর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করা আছে। পলাতক আসামিরা যে দেশে অবস্থান করছে, সে দেশের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত আছে। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের মধ্যে মেজর (অব.) নূর চৌধুরী বর্তমানে সপরিবারে কানাডায়, আবদুর রশিদ ও মেজর (বরখাস্ত) শরিফুল ইসলাম ডালিম পাকিস্তান বা লিবিয়ায়, লে. কর্নেল (অব.) রাশেদ চৌধুরী আমেরিকা এবং রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন খান ভারতে অবস্থান করছে।

ফরিদা ইয়াসমিনের অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট হতে এ পর্যন্ত কল্যাণ অনুদান ও করোনাকালীন আর্থিক সহায়তা হিসেবে সারা দেশে ১৩ হাজার ৫৮২ জন সাংবাদিক ও সাংবাদিক পরিবারের মধ্যে ৪৫ কোটি ২৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনি ফারুক-রশিদরা জাতির পিতাকে হত্যার পরিকল্পনা করে, যেটা জিয়া জানত। অথচ জাতির পিতাই মেজর জিয়াকে ১৯৭২ সালে কর্নেল এবং ১৯৭৩ সালে ব্রিগেডিয়ার এবং একই বছরে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতির চেয়ারে নিজেকে আজীবন আসীন রাখার বাসনায় সেনাছাউনিতে বসে দলছুট রাজনীতিবিদদের নিয়ে বিএনপি গঠন করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর জিয়া সংবিধান লঙ্ঘন করে একাধারে সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতির পদ দখল করেন। ইতিহাসের ঘৃণ্যতম হত্যাকান্ডে জিয়ার সংশ্লিষ্টতা ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা জানান, খুনি জিয়া রক্তাক্ত হাতেই খাবার খেতে বসতেন এবং খেতে খেতেই ফাঁসির আদেশে স্বাক্ষর করতেন। অ্যান্থনী মাসকারেনাহাসের ‘বাংলাদেশ লিগ্যাসী অব ব্লাড’ বইয়ের উদ্বৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যেখানে তিনি লিখেছেন, ‘সরকারি হিসাবমতে জিয়া ১৯৭৭ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র দুই মাসের মধ্যে ১১৪৩ জন সৈনিককে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছিল। জিয়া ইনডেমনিটি জারি করে জাতির পিতার খুনিদের রক্ষা করে। তাদের বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে চাকরি দিয়ে পুনর্বাসন করে। ১৯৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর দালাল আইন বাতিল করে সাজাপ্রাপ্ত ১১ হাজার রাজাকার ও আলবদরকে কারাগার থেকে ছেড়ে দেয়। যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়, মন্ত্রী বানায়। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমানের প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা জানান, সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নকল্পে ফোর্সেস গোল-২০৩০ এর আলোকে রাশিয়া, চীন, তুরস্ক, ভারতসহ সমরাস্ত্র শিল্পে উন্নত বিভিন্ন দেশ থেকে সমরাস্ত্র ক্রয় কার্যক্রম চলমান রয়েছে যা ভবিষ্যতে সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে ৫৭৫টি ইউনিটের মাধ্যমে ৩৩ লাখ ৫০ হাজার ২৭৪ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি শনাক্ত করে নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র (সুবর্ণ নাগরিক কার্ড) প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে নারী প্রতিবন্ধী ১৩ লাখ ১২ হাজার ৫৯৪ জন। সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য এস এম আতাউল হকের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালে ৭ হাজার ৪৮১ কোটি ৮৩ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ২০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছে ২ হাজার ৫০৩ জন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৮১৭ জন। ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে উপকূলীয় ১৯টি জেলায় নগদ অর্থ, চাল, শুকনা ও অন্যান্য খাবার, শিশুখাদ্য বাবদ অর্থ, গো-খাদ্য বাবদ অর্থ, ঢেউটিন, ধানের বীজ, সারসহ বিভিন্ন উপকরণ জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়