ঢাকা, রোববার   ০৭ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

চীনের অর্থায়নে পণ্যবাহী জাহাজ কিনছে সরকার

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:০০, ৪ জুলাই ২০২৪  

চীনের অর্থায়নে পণ্যবাহী জাহাজ কিনছে সরকার

চীনের অর্থায়নে পণ্যবাহী জাহাজ কিনছে সরকার

চীন থেকে ঋণ নিয়ে পণ্যবাহী ৪টি জাহাজ কিনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। এর মধ্যে দুটি ক্রুড অয়েল মাদার ট্যাঙ্কার এবং দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৮ জুলাই চার দিনের সফরে যাচ্ছেন। ওই সফরে জাহাজগুলো কেনার ব্যাপারে ঋণচুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। জিটুজি পদ্ধতিতে জাহাজগুলো কেনা হবে। এর মধ্যেতেলবাহী জাহাজ প্রতিটির দাম ৭৮০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আর কার্গোবাহী জাহাজ প্রতিটির দাম ৪৬২ কোটি ৩১ লাখ টাকা।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চীনের এক্সিম ব্যাংকের ঋণে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করা হবে। ২ শতাংশ সুদে ৫ বছর গ্রেস পিরিয়ড হিসাবে ২০ বছর ধরা হয়েছে ঋণের মেয়াদ। অর্ডার দেওয়ার পর আনুমানিক ৩২ থেকে ৩৪ মাসের মধ্যে জাহাজগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হতে পারে। চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট (সিএমসি) ঠিকাদার হিসেবে প্রকল্পের জাহাজ সংগ্রহ করবে। ২ হাজার ৬২০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৪৮৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা বৈদেশিক ঋণ।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন চীন সফরে বিএসসির জন্য জাহাজ কেনার আলোচনার কথা রয়েছে। বিএসসির জন্য এ ঋণচুক্তি হলে তা সই করবে ইআরডি। চুক্তির সিদ্ধান্ত উভয় দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বিষয়।

জানা গেছে, বিএসসির এ জাহাজগুলো কেনার প্রকল্প একনেক অনুমোদিত। ক্রুড অয়েল মাদার ট্যাঙ্কারের প্রতিটির ধারণক্ষমতা ১ লাখ ১৪ হাজার ডিডব্লিউটি সম্পন্ন (ডেড অয়েট টনেজ)। আর মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার প্রতিটির সক্ষমতা ৮১ হাজার ৫০০ ডিডব্লিউটি। জাহাজগুলো বিএসসির বহরে যুক্ত হলে জ¦ালানিবাহী জাহাজের মাধ্যমে বছরে ২০ লাখ টন ক্রুড অয়েল পরিবহন সম্ভব হবে। পাশাপাশি বাল্ক জাহাজ দুটির মাধ্যমে বছরে ১৫ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টন কার্গো পরিবহন সক্ষমতা বাড়বে। সমুদ্রে পরিচালনার জন্য এসব জাহাজে বছরে প্রায় ২৫০ জন মেরিন অফিসার ও ক্রুর কর্মসংস্থান হবে। আবার জাহাজ অপারেশনকালে পোর্ট চার্জ, বীমা, রেজিস্ট্রেশন, মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও শুল্ককর আদায় এবং জাহাজ ভাড়া বাবদ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করবে সরকার। বড় কথা, মাদার ট্যাঙ্কার যুক্ত হলে এটি হবে বিএসসির বহরে সবচেয়ে বড় জাহাজ। এর মাধ্যমে অপরিশোধিত তেল পরিবহন করে দেশে জ¦ালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে। আবার বাল্ক ক্যারিয়ারে কয়লা, খাদ্যশস্য, সিমেন্টসহ বিভিন্ন কার্গো পরিবহনের সুযোগও তৈরি হচ্ছে।

জানা গেছে, দেশের তেল আমদানির চাহিদা পূরণে ভবিষ্যতে ক্রুড অয়েল ও রিফাইন্ড প্রোডাক্ট দ্রুত সময়ে খালাসের জন্য ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপলাইন’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করেছে বিপিসি। ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বঙ্গোপসাগর থেকে সরাসরি পাইপলাইনের মাধ্যমে ট্যাঙ্কার থেকে ক্রুড অয়েল ও রিফাইন্ড পণ্য ডিপোতে স্থানান্তর করা হবে। এতে ক্রুড অয়েল পরিবহনে বিদেশি জাহাজের ওপর নির্ভরতা কমাতে পারবে বিএসসি।

১৯৮২ সালের পর থেকে ভাড়া করা জাহাজের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল পরিবহন করছে বিএসসি। তা ছাড়া বিপিসির ক্রুড অয়েল লাইটারেজ করার উপযোগী করে নির্মিত সংস্থার নিজস্ব বাংলার জ্যোতি ও বাংলার সৌরভ কাজ করছে। বিএসসির বহরে কোনো মাদার ট্যাঙ্কার না থাকায় এ খাতে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হচ্ছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশে কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। আরও কয়েকটি করা হবে। বিএসসির জাহাজ মানে জাতীয় পতাকাবাহী বাহন। আর দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত কার্গো পরিবহনে কয়লা আমদানির জন্য মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার সংগ্রহ জরুরি। এ কারণে বিদেশ থেকে বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কয়লা পরিবহনের জন্য ৮১ হাজার ৫০০ ডিডব্লিউটি ক্ষমতার দুটি মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার কিনতে চাইছে বিএসসি।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়