ঢাকা, সোমবার   ২৪ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ৯ ১৪৩১

উত্তরবঙ্গের জন্য বড় খবর, ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধু রেল সেতুতে চলবে ট্রেন

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৪১, ১৬ জুন ২০২৪  

উত্তরবঙ্গের জন্য বড় খবর, ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধু রেল সেতুতে চলবে ট্রেন

উত্তরবঙ্গের জন্য বড় খবর, ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধু রেল সেতুতে চলবে ট্রেন

চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে। ইতিমধ্যে এই সেতুর মূল কাঠামোর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়েছে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার সেতুর সুপার স্ট্রাকচার।  
 
গতকাল শনিবার (১৫ জুন) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসুদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘নদীর ভেতরে সেতুর মূল স্ট্রাকচারের কাজ শেষ হয়েছে। আনুষাঙ্গিক কাজ চলছে। আশা করছি ডিসেম্বরেই সেতুটি উদ্বোধন করা হবে এবং ট্রেন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া সম্ভব হবে। অ্যাডজাস্টমেন্ট, দুদিকের স্টেশন আধুনিকায়ন, স্লিপারবিহীন রেলপথ স্থাপনের কাজ চলছে।’

প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০২১ সালে মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে পাইলিংয়ের মাধ্যমে রেলসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে নির্মাণকাজের ব্যয় ধরা হয় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। ডব্লিউডি-১ ও ডব্লিউডি-২ নামে দুটি প্যাকেজে জাপানি পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।   

ডব্লিউডি-১ প্যাকেজটি বাস্তবায়ন করছে জাপানি আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওবাইসি, টোয়া করপোরেশন ও জেইসি (ওটিজে) জয়েন্ট ভেনচার। ডব্লিউডি-২ প্যাকেজটি বাস্তবায়নে রয়েছে জাপানের আইএইচআই ও এসএমসিসি জয়েন্ট ভেনচার। এছাড়া সেতুর উভয় প্রান্তের দুই স্টেশনে সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপনে ডব্লিউডি-৩ নামে অপর একটি প্যাকেজের কাজও চলছে। 

সেতুটি নির্মাণে জাপান, ভিয়েতনাম, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের কর্মীরা নিয়োজিত আছেন। ইতিমধ্যে ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার থেকে আনা মরিচারোধী স্টিলের স্প্যান সেতুর ওপর বসানোর কাজ শেষ হয়েছে।  

বঙ্গবন্ধু রেলসেতুতে দেশে প্রথমবারের মতো ব্যবহার হচ্ছে জাপানি আধুনিক ডাইরেক্ট রেল ফ্যাসেনার প্রযুক্তি। স্প্যানের ওপর সরাসরি বসানো হচ্ছে রেললাইন। এতে সেতুর ওপর রেললাইনের স্থায়িত্ব বাড়ার পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণ খরচও কম হবে। এ সেতুতে অপর প্রান্তের ট্রেনকে পারাপারের জন্য রেল থামিয়ে বসে থাকতে হবে না। সেতুটি ঢাকার সঙ্গে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা অঞ্চলের রেল যোগাযোগের বিড়ম্বনা কাটিয়ে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।  

সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করবে। কমে যাবে পরিবহন খরচও। সেই সঙ্গে মহাসড়কের ওপর চাপও অনেকটা কমে আসবে। উত্তরবঙ্গ থেকে বিভিন্ন পণ্য সহজেই ঢাকাসহ সারাদেশ রপ্তানি করা সম্ভব হবে।  

বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট গ্লোবাল লিমিটেডের সাব স্ট্রাকচার ইঞ্জিনিয়ার রবিউল আলম বলেন, ‘সেতুর ৫০টি পিলারের মধ্যে সবকটি বসানো হয়েছে। প্রতি দুটি পিলারের মাঝখানে একটি করে মোট ৪৯টি স্প্যান বসানো শেষ হয়েছে। সেতুর ওপরে আড়াই কিলোমিটারেরও বেশি রেললাইন স্থাপন শেষ হয়েছে।’
 
প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি স্প্যানের ওপর জাপানিদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হচ্ছে। ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এ সেতুটির নির্মাণকাজ ডিসেম্বরেই শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
  
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসুদুর রহমান বলেন, ইতিমধ্যে সেতুর ৮৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখন পাইপলাইন, স্লিপারবিহীন রেলপথ স্থাপন, ফ্লাইওভার, ফুটওভার, স্টেশন বিল্ডিং, লিফট, লিংক ট্যাংক ও সিগন্যালিং স্থাপনের কাজ চলছে। সুপার স্টাকচারগুলোর মেইন মেম্বারগুলো লাগানো হয়েছে। সেই সঙ্গে কার্ভ, মেটারল কর্টসহ ছোটখাট মেম্বারগুলোও লাগানো হয়েছে। এখন শুধু অ্যাডজাস্টমেন্ট বাকি রয়েছে। অ্যালাইনমেন্ট ঠিক করা হচ্ছে, লেভেল ঠিক করা হচ্ছে। বিভিন্ন ড্রেনের কাজ, কালভার্টগুলো শেষ হয়ে গেছে।
  
১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের গতিসীমা। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হওয়ায় সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ঘটছে শিডিউল বিপর্যয়। বাড়ছে যাত্রী ভোগান্তি। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়