দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর মূল্যায়ন গুরুত্বপূর্ণ

নিউজ ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ০১:২৭ পিএম, ৩০ জুন ২০২৪ রোববার

দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর মূল্যায়ন গুরুত্বপূর্ণ

দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর মূল্যায়ন গুরুত্বপূর্ণ

দাম্পত্য জীবন মানুষের নৈতিকতা ও আল্লাহভীতি অর্জনে সহায়ক। ইসলাম বিয়ে ও সুস্থ-স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবনের প্রতি মানুষকে উৎসাহিত করে, যেন সে অনৈতিকতা ও অন্যায় থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে। যদিও আল্লাহভীতি ও নৈতিকতা অর্জন করা সব সময় মুমিনের জন্য আবশ্যক। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো। তাহলে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কর্ম ত্রুটিমুক্ত করবেন এবং তোমাদের পাপ ক্ষমা করবেন। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে, তারা অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে।’

(সুরা : আহজাব, আয়াত : ৭০-৭১)

স্ত্রীর মূল্যায়ন গুরুত্বপূর্ণ কেন? : ইসলাম দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছে এবং স্বামীর ব্যাপারে তার মূল্যায়নকে গুরুত্ব দিয়েছে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি আমার পরিবারের কাছে তোমাদের চেয়ে উত্তম। তোমাদের কোনো সঙ্গী মৃত্যুবরণ করলে তার সমালোচনা পরিত্যাগ করো।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৮৯৫)

স্ত্রীদের চোখে মহানবী (সা.) : স্ত্রীদের চোখে মহানবী (সা.) ছিলেন সর্বোত্তম ব্যক্তি। তাঁরা মহানবী (সা.)-এর চারিত্রিক মাধুর্য ও সর্বোত্তম আদর্শের অনুসারী হওয়ার সাক্ষ্য দিয়েছেন।

সাআদ বিন হিশাম (রহ.) থেকে বর্ণিত, ‘আমি বললাম, হে উম্মুল মুমিনিন! রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আখলাক সম্পর্কে আমাকে কিছু অবহিত করুন। এ কথা শুনে তিনি আমাকে বলেন, তুমি কি কোরআন পড়ো না? আমি বললাম, হ্যাঁ, পড়ি। তিনি বললেন, আল্লাহর নবী (সা.)-এর আখলাক ছিল কোরআন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৬২৪)

স্ত্রীর মূল্যায়ন পেতে হলে করণীয় : দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর মূল্যায়ন পেতে ইসলাম চারটি বিশেষ পরামর্শ দিয়ে থাকে। তা হলো—

১. কথা বলার সুযোগ দেওয়া : ইসলাম দাম্পত্য জীবনের মান-অভিমানকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে বলে।

ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, আমরা কোরাইশ বংশের লোকেরা (জাহেলি যুগে) আমাদের স্ত্রীদের ওপর প্রভুত্ব করে চলতাম। যখন আমরা মদিনায় এলাম, তখন এমন লোকদের দেখতে পেলাম, যাদের ওপর তাদের স্ত্রীরা প্রভাব বিস্তার করছিল। এমন পরিবেশে আমাদের নারীরা তাদের (মদিনা‌বাসী) নারীদের অভ্যাস রপ্ত করতে শুরু করে দেয়। এরপর একদিন আমি আমার স্ত্রীর ওপর রাগান্বিত হলাম। সে আমার কথার প্রত্যুত্তর করতে লাগল। আমি আমার সঙ্গে তার প্রত্যুত্তর করাকে খুবই অপ্রিয় মনে করলাম। সে বলল, আপনার সঙ্গে আমার কথার প্রত্যুত্তর করাকে অপছন্দ করছেন কেন? আল্লাহর কসম! নবী (সা.)-এর স্ত্রীরাও তো তাঁর সঙ্গে কথার প্রত্যুত্তর করে থাকে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৫৮৭)
২. সদাচার করা : ইসলাম স্ত্রীদের প্রতি সদাচারের নির্দেশ দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ধৈর্য ও সংযমের পরিচয় দিতে বলেছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের সঙ্গে সত্ভাবে জীবন যাপন করবে; তোমরা যদি তাদের অপছন্দ করো, তবে এমন হতে পারে যে আল্লাহ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন তোমরা তাকেই অপছন্দ করছ।’

(সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯)

৩. মৌলিক অধিকারে সমতা : ইসলাম পুরুষকে নারীর অভিভাবক ঘোষণা করলেও মৌলিক অধিকারে নারী ও পুরুষের সমতা ঘোষণা করেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘নারীদের তেমনি ন্যায়সংগত অধিকার আছে, যেমন আছে তাদের ওপর পুরুষদের; কিন্তু নারীদের ওপর পুরুষের আছে মর্যাদা। আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২২৮)

৪. উভয়ের প্রচেষ্টায় আসে শান্তি : ইসলামের শিক্ষা হলো স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের প্রচেষ্টায় সংসার সুখময় হয়। আল্লাহ বলেন, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে আছে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সঙ্গিনীদের, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য তাতে অবশ্যই বহু নিদর্শন আছে।’

(সুরা : রোম, আয়াত : ২১)

আল্লাহ সবাইকে আদর্শ দাম্পত্য জীবনযাপনের তাওফিক দান করুন। আমিন।